গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত, সীতাকুণ্ড-চট্টগ্রাম

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে এটা মুরাদপুর বীচ নামেও পরিচিত। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালি সৈকত মাত্র ৫ কিলোমিটার। একবারেই ভিন্ন ধরনের এই সৈকত এটি। আর সকল সমুদ্র সৈকত যেমন বালুকাবেলাবিশিষ্ট, আর এটি তার ঠিক উল্টো। এর একদিকে দিগন্তজোড়া জলরাশি আর অন্য দিকে কেওড়া বন এই সাগর সৈকতকে করেছে অনন্য।কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের চারিদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল লক্ষ করা যায়, এই বন সমুদ্রের অনেকটা ভেতর পর্যন্ত চলে গেছে। এখানে পাওয়া যাবে সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মত পরিবেশ। গুলিয়াখালি সৈকতকে ভিন্নতা দিয়েছে সবুজ গালিচার বিস্তৃত ঘাস।

সাগরের পাশে সবুজ ঘাসের উন্মুক্ত প্রান্তর নিশ্চিতভাবেই আপনার চোখ জুড়াবে। বীচের পাশে সবুজ ঘাসের এই মাঠে প্রাকৃতিক ভাবেই জেগে উঠেছে আঁকা বাঁকা নালা। এইসব নালায় জোয়ারের সময় পানি ভরে উঠে। চারপাশে সবুজ ঘাস আর তারই মধ্যে ছোট ছোট নালায় পানি পূর্ণ এই দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। এখান থেকে চাইলে জেলেদের বোটে সমুদ্রে ঘুরে আসতে পারেন। বোট ভাড়া নেয়ার সময় দরদাম করে করে নিতে হবে। ক্যাম্পিং করতে চাইলে তাবু নিয়ে গেলে থাকতে পারবেন।

কিভাবে যাবেনঃ

ঢাকা থেকে চট্রগ্রামগামী যে কোন বাসে করেই যেতে পারবেন সীতাকুন্ড। এসি ও নন এসি এইসব বাসের ভাড়া ৪২০-১০০০ টাকা। প্রয়োজন হলে বাসের সুপারভাইজার কে আগেই বলে রাখবেন সীতাকুন্ড নামিয়ে দিতে। ঢাকা থেকে সীতাকুন্ড মেইল ট্রেনে করে জনপ্রতি ১২০ টাকা ভাড়া সীতাকুণ্ড আসতে পারেন। ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে করে ফেনী যেতে পারবেন, শ্রেনী ভেদে ভাড়া ২৬৫-৮০০ টাকা। ফেনী থেকে লোকাল বাসে করে সীতাকুণ্ড যেতে পারেন। ফেনী থেকে লোকাল বাসে সীতাকুণ্ড যেতে ৫০ থেকে ৭০ টাকা ভাড়া লাগবে।




আর যদি চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুন্ড আসতে চান, তাহলে চট্রগ্রামের অলংকার মোড়, এঁকে খান মোড়, কদমতলী থেকে সীতাকুণ্ড যাবার বাস ও মেক্সি পাওয়া যায়। পছন্দ মতো জায়গা থেকে চলে আসতে পারবেন সীতাকুণ্ড বাজারে।

সীতাকুন্ডের বাস স্ট্যান্ড ব্রীজের নিচ থেকে সরাসরি সিএনজি/অটো নিয়ে গুলিয়াখালি বীচের বাঁধ পর্যন্ত চলে যেতে পারবেন। রিজার্ভ ভাড়া নিবে ১৫০-৩০০ টাকা। দরদাম করে নেয়াই ভাল। সীতাকুণ্ড ফিরে আসার জন্যে আগে থেকেই সিএনজি চালকের নাম্বার নিয়ে রাখতে পারেন অথবা রিজার্ভও নিতে পারেন। সন্ধ্যা হয়ে গেলে অনেক সময় ফিরে আসার সময় সিএনজি/অটো পাওয়া যায় না।

কোথায় থাকবেনঃ
গুলিয়াখালি সি বিচ বা এর আশেপাশে থাকার ভাল কোন ব্যবস্থা নেই। শুধুমাত্র সী-বিচে ছোট একটি দোকান আছে তাই প্রয়োজনে সীতাকুণ্ড বাজার থেকে সাথে খাবার নিয়ে নিন। থাকতে চাইলে সীতাকুণ্ড বাজারে সাইমুন এবং সৌদিয়া হোটেলে থাকতে পারবেন। সাইমুনে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায় রুম পাবেন আর সৌদিয়ায় রুমের ভাড়া ৬০০ থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে । আরো ভালো কোথাও থাকতে চাইলে আপনাকে চট্রগ্রাম চলে যেতে হবে।

চট্টগ্রামের কিছু ভাল মানের হোটেলের ঠিকানা ও যোগাযোগের নাম্বার

হোটেল প্যারামাউন্ট ইন্টারন্যাশনাল
স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম
ফোনঃ ০১৭১৩ ২৪৮৭৫৪, ০৩১ ২৮৫৬৭৭১

হোটেল সাফিনা লিঃ
৫০ জুবিলি রোড, কোতয়ালী, চট্টগ্রাম
ফোনঃ ০৩১ ৬১৬৪৬৭

হোটেল নব ইন
রোড-৫, বাড়ি-৫, ও আর নিজাম রোড আ/এ, চট্টগ্রাম
ফোনঃ ০১৭৫৫ ৬৫৪৩৮২

এশিয়ান এসআর হোটেল
২৯১ স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম
ফোনঃ ০১৭১১ ৮৮৯৫৫৫

ল্যান্ডমার্ক হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট
৩০৭২ শেখ মুজিব রোড, চট্টগ্রাম
ফোনঃ ০১৮২০ ১৪১৯৯৫, ০১৭৩১ ৮৮৬৯৯৭

আরও পড়ুনঃ সীতাকুন্ডে দুইদিনে যেসব জায়গা ঘুরে দেখবেন

সচেতনতাঃ ভ্রমণের সময় ভ্রমণস্থানের পরিবেশ যাতে নোংরা না হয়, সেদিকে অবশ্যই নজর রাখুন। যেকোন খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল ইত্যাদি যেখানে-সেখানে না ফেলে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। সেরকম কোন জায়গা তাৎক্ষনিক খুঁজে না পেলে সেগুলো নিজের সাথেই রাখুন। পরে সুযোগ-সুবিধামতো ময়লা ফেলার স্থানে ফেলে দিবেন।