তিনাপ সাইতার ঝর্ণা

পানি প্রবাহের হিসাবে তিনাপ সাইতার বাংলাদেশের বৃহত্তম জলপ্রপাত বা ঝর্ণা। এটি বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ির পাইন্দু খালে অবস্থিত। পাইন্দু খালে অবস্থিত বলে এর আরেক নাম পাইন্দু সাইতার। ঝর্ণাপ্রেমী মানুষের কাছে এটি এখন অনেক জনপ্রিয় একটি জলপ্রপাত।

কিভাবে যাবেনঃ তিনাপ সাইতার যেতে হলে প্রথমেই যেতে হবে বান্দরবান। তারপর সেখান থেকে দুটি রাস্তা বা রুটে যেতে পারবেন। প্রথম রাস্তাটি তুলনামূলক সহজ। এবং দ্বিতীয়টি কঠিন।

রুট ১ঃ বান্দরবান পৌঁছানোর পর সেখান থেকে যেতে হবে রুমা বাস স্ট্যান্ড। রুমা বাস স্ট্যান্ড থেকে চাঁদের গাড়ি নিয়ে যেতে হবে বেতেল পাড়া হয়ে আত্তাপাড়া। চাঁদের গাড়ির ভাড়া নিতে পারে ২০০০ টাকার মতো। আত্তাপাড়া থেকে তিনাপ সাইতার ট্রেকিং বা হেঁটে যেতে সময় লাগবে দুই ঘন্টার মতো।

রুট ২ঃ বান্দরবান নেমে সেখান থেকে রোয়াংছড়ি যাওয়ার বাস স্ট্যান্ডে চলে যেতে হবে টমটম বা ইজি বাইকে করে। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ১০ টাকা। এখান থেকে প্রতি এক ঘন্টা পর পর রোয়াংছড়ির বাস ছেড়ে যায়। জনপ্রতি বাস ভাড়া ৬০ টাকা আর সময় লাগবে প্রায় ঘন্টা দেড়েক। আগে থেকে গাইড ঠিক করা থাকলে তাকে নিয়ে রওনা দিতে হবে এখান থেকে। আর গাইড না থাকলে এখান থেকে একজন গাইড সঙ্গে নিন। যে কয়দিন থাকবেন, সেই কয়দিনের বাজার এখান থেকে করে নিলে ভাল। এই ব্যাপারে গাইড আপনাকে সহযোগিতা করবে। এখান থেকে হেঁটে বা চাঁদের গাড়িতে করে রনিনপাড়ায় যেতে হবে। চাঁদের গাড়ি রিজার্ভ নিলে খরচ পড়বে ৫৫০০ থেকে ৬০০০ টাকার মতো। চাঁদের গাড়িতে রওনা দেয়ার পর প্রায় আড়াই ঘন্টা পর নামিয়ে দিবে খাড়া একটি পাহাড়ের কাছে। সেখান থেকে বাকি রাস্তা হেঁটে যেতে ঘন্টাখানেক লাগবে। আর যদি পুরোটাই হেঁটে যেতে চান, তাহলে সময় লাগবে প্রায় ছয়-সাত ঘন্টা এবং বেশ কষ্টসাধ্য বিষয়। রনিনপাড়া পৌঁছে আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হবে। অনেক সময় তিনাপ সাইতার যাওয়ার অনুমতি থাকেনা। তাই বান্দরবান থেকে রওনা দেয়ার আগে এই ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে যাওয়াই ভাল। পরদিন খুব ভোরে তিনাপ সাইতারের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। রাতটা রনিনপাড়াতেই কাটাতে হবে। যেহেতু বাজার করে নিয়ে আসতে হয়, তাই রান্নার ব্যবস্থা এখানেই হবে। থাকা, খাওয়া এবং বাথরুমের ব্যবস্থা গাইডই করবে। এখানে বেশ কিছু বাড়িতে সোলার বা সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে। তাই, যেইখানে থাকছেন, সেখানে যদি এই বিদ্যুৎ পেয়ে থাকেন, তাহলে আপনার মোবাইল চার্জ করে নিতে পারবেন। সাথে পাওয়ার ব্যাঙ্ক থাকলে তো আরো ভাল।

ঢাকা থেকে বান্দরবান যাওয়ার কিছু বাসের নাম ও টিকেটের মূল্য

কোথায় থাকবেনঃ রনিনপাড়ায় আপনাকে আদিবাসীদের বাড়িতেই থাকতে হবে, যেটার ব্যবস্থা গাইডই করে দিবে। প্রতি রাতে থাকার জন্য জনপ্রতি ১৫০ টাকা খরচ হবে। রোয়াংছড়িতে থাকার জন্য কয়েকটি হোটেল পাবেন।




কিছু দরকারী টিপসঃ
১। যেহেতু পাহাড়ি পথে অনেক রাস্তা হাঁটার ব্যাপার আছে, তাই ভাল গ্রিপের স্যান্ডেল নিতে হবে। অন্য কোন টাইপের জুতো না নেয়াই ভাল।
২। হাঁটুকে নিরাপদ রাখার জন্য নী-ক্যাপ পরে নিতে পারেন। অ্যাঙ্কলেট পরলেও উপকার পাবেন।
৩। সাথে কিছু শুকনা খাবার যেমন- খেজুর, বিস্কিট রাখা খুবই জরুরী। আর ম্যাংগোবার, স্যালাইন, গ্লুকোজ, চকলেট এগুলোও সাথে নেয়াও খুব দরকার।
৪। ব্যাগ যতটা হালকা রাখবেন, ততই ভাল।
৫। আর্মি ক্যাম্পে অনেক সময় যেকোন ফটো আইডি দেখতে চায়। তাই ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি রাখুন।
৬। জরুরী ওষুধপত্র সাথে নিন।
৭। যেখানেই ঘুরতে যান না কেন, সেখানের পরিবেশ যাতে পরিচ্ছন্ন থাকে সেদিকে নজর রাখুন।
Tinap Saitar Waterfall located in Bandarban